আশির দশকে যারা বাংলাদেশ টেলিভিশনের দর্শক, তাদের কাছে অশিনের গল্প মোটামুটি পরিচিত। তবে বিটিভিতে প্রচারিত ‘অশিন’ নামে জাপানি ড্রামা দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়নি, তাদের জন্য বলছি; ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর অশিনের জীবনের সংগ্রাম ও বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এই নাটকের পটভূমি। সাধারণ একজন মেয়ে হয়েও, অশিন নিজে বাজার সদাই এর একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্যবসাই তাকে জীবনের মোড় ঘুরাতে ও জীবনের নানান রঙ-রূপ দেখিয়েছিলো।
জীবন সংগ্রামে জর্জরিত একটি পরিবার থেকে উঠে আসা অশিন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো এক যুবককে। তাদের ঘরে একটি সন্তানও এসেছিলো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, তার স্বামী তাকে রেখে চলে যায়। ছোট্ট ছেলে সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় তার কষ্টের জীবন। স্থানীয় একটি পরিবারের দৈনন্দিন কাজকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করা শুরু করে অশিন। সেই পরিবারই অশিনের মাছ ব্যবসা দাঁড় করাতে সাহায্য করেছিলো। প্রতিদিন ভোরে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে অশিন চলে যেতো নদীর ধারে মাছের নিলামে। নিলামে সংগৃহীত মাছ বিক্রি করে দিতো পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে। নিলামের মাছের কম দাম, প্রতিবেশীদের সাথে সুন্দর আচরণ ও মানের প্রতিশ্রুতি- এই তিনকে পুঁজি করে অশিনের ব্যবসা এতোটাই উন্নতি লাভ করে যে, একার হাতে শুরু করা অশিনের মাছ ব্যবসা, গ্রোসারি চেইনশপে পরিণত হয়েছিল। জীবনের উত্থান-পতন, নানাবিধ অভিজ্ঞতা ও সাধারণ উপস্থাপনায় এই ড্রামা তৎকালীন দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিল বলে, আজও এর কথা আমাদের মনে পড়ে।
আশির দশক থেকে এবার একটু বর্তমান সময়ের দিকে নজর দেই। ছোটবেলায় বাবা অথবা কাকার সঙ্গে বাজারে যাওয়ার যে উচ্ছ্বাস, সেরকম অভিজ্ঞতা না থাকলেও বাজারে গিয়ে সবচাইতে অবাক হয়েছিলাম ব্যাংককে। ২০০৬ সালে যখন আমি এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তখন তুলনামূলক কম দামে বাজার করার জন্য একসাথে কয়েকজন মিলে গিয়েছিলাম তালাদ থাইতে। ভার্সিটি ক্যাম্পাসের হাইওয়ের অপরপ্রান্তে ওই বাজারে গিয়ে আমি আসলেই অবাক হয়েছিলাম। সরাসরি চাষির কাছ থেকে এত ভালো মানের পণ্য পেয়েছিলাম যে তারপর থেকে বাজারের জন্য বন্ধুরা মিলে তালাদ থাইতেই যেতাম। কারণ ওখান থেকে খুচরা হিসেবে পণ্য কেনা যায় না। সবাই একত্রে মিলেমিশে বেশি করে কিনে, নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতাম। ব্যাংককে এই বাজার করার অভিজ্ঞতা আমাকে মনে করিয়ে দেয় অশিনের কথা। তাই আমিও মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আমাদের দেশেও তো এমন কিছু করা সম্ভব! আর এভাবেই শুরু হয় সদাই এর যাত্রা।
সদাই কী করে?
সদাই এমন একটি অনলাইন গ্রোসারি শপ, যেখানে বাজার বন্ধু আত্মীয় পরিজন মিলে একসাথে বাজার করে, ভাগ করে নেয়ার যে মজা সেটা আপনি পাবেন। পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধন এখানে মুখ্য। কারণ যখন একসাথে সবাই মিলে বাজার করবেন, সদাই তখন একদম সরাসরি উৎস থেকে বাল্ক পরিমাণ পণ্য এনে আপনাদের হাতে পৌঁছে দেবে। ঠিক যেমনটা অশিন করেছিলো। আর আমি তালাদ থাই থেকে যেভাবে বন্ধুদের সাথে কম দামে ফ্রেশ বাজার করতাম আর একসাথে বাজারটাকে উপভোগ করতাম। আমাদের মধ্যে বাজার শেয়ার করার আনন্দ কাজ করতো সদাইও সেই আনন্দের অনুভূতিটা এনে দিতে চায় আপনার দৈনন্দিন বাজারে। তাও আবার কম দামে গ্রুপ ডিসকাউন্টে।
‘ভাবি আপনার কাছে কাঁচামরিচ হবে’? থেকে ‘ভাবি আপনার জন্য কাঁচামরিচ অর্ডার দেবো?’
একটা সময় ছিলো, যখন পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে টুক টাক বাজার সদাই শেয়ারিং হতো। ‘ভাবী, আপনার ঘরে কাঁচামরিচ আছে? থাকলে কয়টা দিন না, বাজার করেই আবার দিয়ে দিবো’। এই যে শেয়ারিং, এটা এখন নেই বললেই চলে। শেয়ারিং এর জায়গাটা নতুন করে আবার সবার মাঝে নিয়ে আসতে চাইছে সদাই। আর শেয়ারিং হবে বাজারের আগে- “ভাবী, কাঁচামরিচ লাগবে নাকি! চলেন একসাথে কিনি, দামেও কম। আর মানও ভালো। আপনার জন্য অর্ডার দিবো?” এটাই গ্রুপ ডিসকাউন্টের আনন্দ!
মাছ কিনতে একত্রে মাওয়া যাত্রা
“চল আজকে মাওয়া ঘাটে চলে যাই। ছোট্ট একটা ট্রিপ হয়ে যাবে পাশাপাশি ফ্রেশ মাছও কিনবো সবাই মিলে”। সবাই মিলে মাওয়া থেকে মাছ কিনলে একদিক দিয়ে যেমন ফ্রেশ মাছ পাওয়া যায় অন্যদিকে দামেও পড়ে কম! আরও সুবিধা হলো, আমাদের একার পক্ষে অনেক সময় বড় বড় মাছ কেনা সম্ভব হয় না। কারণ ছোট ফ্যামিলির জন্য এত বড় মাছ কিনে এক প্রকার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই বড় মাছ কেনার সময় আমরা সঙ্গী খুঁজি! যাতে করে মাওয়া গিয়ে একসাথে বড়মাছ কিনে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া যায়। তাতে করে টাকাও বাঁচল, মাছও পাওয়া গেল টাটকা। সাধ মিটলো সাধ্যের মধ্যেই!
যদিও এখন অনেক অনলাইন বা অফলাইন স্টোরে বড় মাছ প্যাকেটজাত করে ফ্রিজারে সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হয়। যেগুলো তুলনামূলক দাম বেশি এবং কেনার সময়েও এর মান নিয়ে সন্দেহ জাগে। কবের না কবের মাছ, কতদিন ধরে ফ্রিজে। ফ্রেশ পণ্য, ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে সবার আগে এসিয়ে আসছে সদাই গ্রুপ ডিসকাউন্ট।
গ্রুপ ডিসকাউন্ট কীভাবে কাজ করে?
সদাই এমনই একটি অনলাইন গ্রোসারি শপ যা কোন ফিজিক্যাল স্টোর নেই। অর্থাৎ আমরা কোন পণ্য স্টোর করি না। তাই আমরা প্রথমে আপনাদের থেকে অর্ডার গ্রহণ করি, এবং অর্ডারের ভিত্তিতে সরাসরি উৎস থেকে পণ্য নিয়ে আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই।
একদিকে রেগুলার অর্ডারের মতো পণ্য অর্ডার করা যায়, আবার গ্রুপ ডিসকাউন্টেও অর্ডার করা যায়। গ্রুপ ডিস্কাউন্টের সুবিধা হলো, বাজারের চাইতে তুলনামূলক কম মূল্যে ফ্রেশ গ্রোসারি পাওয়া যায়। তার জন্য প্রথমে আপনাকে প্রি অর্ডারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সকলের প্রি-অর্ডার মিলে যদি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্ডার পড়ে, তাহলে গ্রুপ ডিস্কাউন্ট পান ক্রেতারা। অর্থাৎ যত বেশি প্রি-বুকিং, ডিস্কাউন্টের সম্ভাবনাও তত বেশি। এখানেই আসে সেই একসাথে বাজার করার আনন্দ। গ্রুপ ডিসকাউন্টের নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রি-অর্ডার ফিল আপ করতে ক্রেতারা তাদের বন্ধু আত্মীয়স্বজন মিলে একটা বড় মাছ বা পুরো একটা ষাঁড় গরু অর্ডার করছেন। নিজেরা ভাগ করে নিচ্ছে বাজারের চাইতে কম দামে!
সদাই থেকে কেন বাজার করবেন?
শুরুতে নিজেদের মধ্যেই একসাথে বাজার করার একটা ট্রেন্ড চালু করে সদাই টিম। টিমের প্রতিটা সদস্য নিজের ঘরের জন্য বাজার সদাই থেকেই করে। এরপর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো সদাই এর কাস্টমার। বাড়তে বাড়তে এখন এমন হয়েছে একই ক্রেতা বারবার সদাইতে গ্রোসারি অর্ডার করেন শুধুমাত্র ফ্রেশ ও নিরাপদ পণ্য বাজারের চাইতে সুলভে কেনার জন্য! বিশেষ করে মাছ-মাংস ও কাঁচাবাজের বেলায় সদাই এর উপর গ্রাহকের আস্থাই আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছে।
ফ্রেশ পণ্যের নিশ্চয়তা
পূর্বেই বলা হয়েছে, একদিকে সদাই এর কোন ফিজিক্যাল আউটলেট নেই বা স্টোর নেই। কিন্তু আমরা সরাসরি কৃষক থেকে বা পাইকার থেকে বাল্ক এমাউন্টে পণ্য সংগ্রহ করি এবং আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই। এজন্য আমরা গ্রাহক অর্ডার করা মাত্রই ২ ঘন্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছে না দিয়ে, একটা দিন সময় নেই। কেননা ১-২ ঘন্টার মধ্যে গ্রাহককে ফ্রেশ পণ্য ক্ষেত বা খামার থেকে এনে দেয়া সম্ভব নয়। তাই ডেলিভারি হয় অর্ডারের পরের দিন। মাছ ও মাংসের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। আবার যখন গ্রুপ ডিসকাউন্টে অর্ডার করবেন, সেটি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে ডেলিভারি দেয়া হয়। ডেলিভারি পেতে হয়ত একটা দিন অপেক্ষা করতে হয়, তবে এই অপেক্ষার ফলে ক্রেতা পাচ্ছেন ফ্রেশ পণ্যের নিশ্চয়তা।
কৃষক, চাষি, খামারিদেরকে ক্রেতার সাথে যুক্ত করে সদাই
সদাই এর অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে, প্রান্তিক খামারি, চাষি ও কৃষকদের সাথে ক্রেতাদের যুক্ত করা। ক্রেতা জানবে কোন খামার থেকে তার মুরগী যাচ্ছে, কোন পুকুর থেকে মাছ তার রান্না ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। কোন ক্ষেতের সবজী দিয়ে ভাত খাচ্ছেন গ্রাহক। একজন ক্রেতার পক্ষে যেহেতু সরাসরি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে রেগুলার বাজার নিয়ে আসা সম্ভব না, তাই এই কাজটাই গ্রাহকের হয়ে করে দিচ্ছে সদাই। এরই সূত্র ধরে, এবার ঈদ উল আযহাতে কুরবানির পশু অনলাইনে বুকিং নেয়া শুরু করেছে সদাই। ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে।
সাধ্যের মধ্যে, ক্রেতার জন্য যা যা করার তার সবই করছে সদাই। বেশি বেশি আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ আমাদের লক্ষ্য নয়। সদাই যেটুকু আশ্বাস দিচ্ছে, সেটুকুই পূরণ করে ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্যেই আমাদের সার্থকতা।
সদাইতে স্বাগতম!
সদাই টিম আপনাদের সকলকে সদাই এর অনলাইন গ্রোসারি শপ ভিজিট করার জন্য আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। আপনি একাও ভিজিট করতে পারেন। যদি একসাথে সবাই মিলে কেনাকাটা উপভোগ করতে চান, তবে বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সকলে মিলে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইটে। সমাজের সবাইকে বাজারের সূত্রে একত্রিত করে ভালো পণ্য ও বাজারের আনন্দ দিতেই আমাদের ট্যাগলাইন ‘একসাথে সবাই’!